Banner 728x90

খুন ধর্ষণ নারী নির্যাতন কমছে না

 

খুন ধর্ষণ নারী নির্যাতন কমছে না




দেশে খুন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধ কমছে না। পুলিশের হিসাবে গত বছর দেশে ৩ হাজার ২৮টি খুন ও ৫ হাজার ২০২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। অর্থাৎ দিনে ৮টির বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং ১৪টির বেশি ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১১ হাজার ৩৭টি। সে হিসাবে দিনে ৩০টির বেশি নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের খাতায়।





তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন বছরই দেশে গড়ে তিন হাজারের বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ২০২২ সালে এ মামলার সংখ্যা ছিল গত বছরের চেয়ে ৯৮টি বেশি। তার আগের বছর ২০২১ সালে করোনাকালে গত বছরের চেয়ে ১৮৬টি বেশি খুনের ঘটনা ঘটে। অবশ্য করোনাকালে বেশ কিছু নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটে, যেগুলোয় পরিবারের সদস্য বা স্বজনেরাই জড়িত ছিলেন। স্ত্রী, সন্তান বা মা-বাবাসহ পরিবারের ছোট্ট শিশুকে পর্যন্ত হত্যার ঘটনা ঘটে।








২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে দিনদুপুরে তিন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট পরে চুয়াডাঙ্গায় সোনালী ব্যাংকের উথলী শাখায় ঢোকে। তারা পিস্তল বের করে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ সবাইকে জিম্মি করে প্রায় ৯ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি ডাকাতি হলেও মামলা হয় দস্যুতার (দণ্ডবিধির ৩৯০ ধারায়)। ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি (১ থেকে ৪ জন) অপর কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক মৃত্যু বা জখমের ভয় দেখিয়ে বলপূর্বক কোনো বস্তু বা অস্থাবর সম্পত্তি অর্পণে বাধ্য করলে তা দস্যুতা বলে গণ্য হবে।’ আর দণ্ডবিধির ৩৯১ ধারায় ডাকাতির মামলা হয়। এ ধারায় বলা হয়েছে, পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি অপর ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের মৃত্যু বা জখমের ভয় দেখিয়ে বলপূর্বক কোনো বস্তু বা অস্থাবর সম্পত্তি অর্পণে বাধ্য করলে তা ডাকাতি বলে গণ্য হবে।


গত বছর সারা দেশে অপহরণের ঘটনায় ৪৬৩টি মামলা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩টি বেশি। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, তিন বছর ধরে অপহরণের ঘটনা পর্যায়ক্রমে বেড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যেমন গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে শেরপুরে যাওয়ার পথে অপহরণ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমানকে। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাঁকে ভারতের মেঘালয় সীমান্তে নিয়ে নির্যাতন চালায় অপহরণকারীরা। ওই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০২৩ সালে দেশে বেড়েছে চোরাচালানের মামলাও। এ বছর সারা দেশে ২ হাজার ৫০০টি চোরাচালানের মামলা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২১৪টি বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থলপথের পাশাপাশি আকাশপথ দিয়ে সোনাসহ বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের সবচেয়ে বেশি সোনা চোরাচালান হয় ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে। এরপর চট্টগ্রামের হজরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। এরপর রয়েছে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর।


দেশে এসব অপরাধ কেন বাড়ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কখনো কখনো অপরাধ বাড়ে, আবার কখনো কমে যায়। নৈতিক মূল্যবোধের অভাব, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে সামাজিক বন্ধন দুর্বল হলে মানুষ অপরাধে যুক্ত হয়। এ কারণে অপহরণসহ অন্যান্য অপরাধ বেড়ে যায়। আর চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে চোরাচালান ধরা পড়েছে। এতে মামলাও বেড়েছে।






পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ২৫ হাজার ৪৯টি মামলা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন এলাকায়। আগের বছরের চিত্রটাও একই ছিল। ২০২২ সালে ডিএমপিতে মোট মামলা হয়েছিল ২৮ হাজার ৭৪৯টি। অন্য দিকে গত বছর সবচেয়ে কম ১ হাজার ৩৫০টি মামলা হয়েছে রংপুর মহানগর পুলিশ (আরপিএমপি) এলাকায়।


অপরাধ দমনে থানাগুলোয় পেশাদার ওসি নিয়োগ দেওয়াটা জরুরি বলে উল্লেখ করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত বুধবার রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অপেশাদার পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ হলে অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ হবে না। থানায় ভালো ওসি নিয়োগ দিলে অপরাধীদের কাছে সেসব খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে এবং তখন চুরি, ছিনতাই, দস্যুতা, চোরাচালান এমনিতেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। অন্য দিকে অপরাধীদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক থাকলে অপরাধ হবেই।


No comments

Powered by Blogger.