বিদ্যুৎ মিটার নিয়ে ভুল, অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য১৬ মে ২০২৪ প্রথম আলো অনলাইনে চিঠিপত্র হিসেবে প্রকাশিত একজন সংবাদকর্মীর ‘একটি মিটারের দাম কত, বছরের পর বছর কেন সেটির ভাড়া দিতে হচ্ছে’ শিরোনামের লেখাটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। লেখাটি পড়ে সাধারণ মানুষের মনে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে। লেখাটিতে কিছু ভুল, অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছিল।বাংলাদেশ সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সমগ্র অঞ্চলে পর্যায়ক্রমে চালু করছে। লেখাটিতে সিঙ্গেল ফেজ প্রিপেইড মিটারের দাম বলা হয়েছে ১৬০০ টাকা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খোলাবাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিঙ্গেল ফেজ প্রিপেইড মিটার ৫৫০০ থেকে ৬০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। যে গ্রাহক খোলাবাজার থেকে মিটার সরবরাহ করেন, সেই গ্রাহকের থেকে প্রতি মাসে মিটার ভাড়া কেটে রাখা হয় না। কেবল অফিস থেকে বিনা মূল্যে যে প্রিপেইড মিটার সরবরাহ করা হয়, সে মিটারের ভাড়া ৪০ টাকা করে কেটে রাখা হয়। একটি সিঙ্গেল ফেজ মিটারের লাইফ সাইকেল যদি ১০ বছর হয়, তবে গ্রাহক ১০ বছরে ৪৮০০ টাকা মিটার ভাড়া দেবেন, যা ৬০০০ টাকা থেকেও কম।সংবাদকর্মী মেইন মিটার বলতে হয়তো থ্রি ফেজ মিটার বুঝিয়েছেন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ অঞ্চলে পিডিবি কর্তৃক থ্রি ফেজ মিটার সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি থ্রি ফেজ মিটারের দাম ২২,৭২৩ টাকা। যদি গ্রাহক ভাড়ায় মিটার নিতে চান, তবে ২৫০ টাকা করে প্রতি মাসে কেটে রাখা হয়। একটি থ্রি ফেজ মিটারের লাইফ সাইকেল যদি ৭ বছর হয়, তবে গ্রাহক ৭ বছরে ২১,০০০ টাকা মিটার ভাড়া দেবেন, যা ২২,৭২৩ টাকা থেকেও কম। গ্রাহক যদি নিজ টাকায় মিটার কিনে থাকেন, তাহলে কখনোই গ্রাহককে মিটারের ভাড়া দিতে হয় না। সিঙ্গেল ফেজ মিটারে গ্রাহক সর্বোচ্চ ৭.৫ কিলোওয়াট লোড ব্যবহার করতে পারে এবং থ্রি ফেজ মিটারে গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫০ কিলোওয়াট লোড ব্যবহার করতে পারে। সংবাদকর্মী উল্লেখ করেন, একজন ক্ষুদ্র গ্রাহক ও একজন বড় ভোক্তা উভয়কেই কমপক্ষে ৭০ অথবা ৯০ টাকা দিতেই হবে, যা ভুল তথ্য।গ্রাহক প্রতি মাসে তাঁর অনুমোদিত লোড অনুযায়ী ডিমান্ড চার্জ দেন। প্রিপেইড মিটারে অনুমোদিত লোড অপেক্ষা বেশি লোড ব্যবহার করলে মিটার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যায়। ডিমান্ড চার্জ প্রতি মাসে একবার বিদ্যুৎ–সংযোগ থাকলেই দিতে হয়। ডিমান্ড চার্জ ধনী-গরিবের জন্য নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে অনুমোদিত লোড ও ট্যারিফের ওপর। যেমন একজন ক্ষুদ্র আবাসিক গ্রাহকের অনুমোদিত লোড যদি ২ কিলোওয়াট হয়, সর্বশেষ বিদ্যুতের খুচরা মূল্যহার অনুযায়ী প্রতি কিলোওয়াট আবাসিক লোডের জন্য ৪২ টাকা ডিমান্ড চার্জ, তাহলে ওই ক্ষুদ্র আবাসিক গ্রাহককে ৮৪ টাকা ডিমান্ড চার্জ দিতে হবে এবং তিনি যদি ৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তবে তাঁর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ব্যতীত ৫.২৬ টাকা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ক্ষেত্রে ৪.৬৩ টাকা হারে বিদ্যুৎ বিল হবে।আবার একজন বড় আবাসিক ভোক্তার অনুমোদিত লোড বেশি হওয়ার কথা ধরি, তাঁর অনুমোদিত লোড ৭ কিলোওয়াট হলে তাঁকেও প্রতি কিলোওয়াট আবাসিক লোডের জন্য ৪২ টাকা ডিমান্ড চার্জ হলে তাঁকে প্রতি মাসে ২৯৪ টাকা ডিমান্ড চার্জ দিতে হবে এবং প্রতি মাসে ১০০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে তাঁকে প্রথম ৭৫ ইউনিটের জন্য ৫.২৬ টাকা, পরবর্তী ১২৫ ইউনিটের জন্য ৭.২০ টাকা, পরবর্তী ১০০ ইউনিটের জন্য ৭.৫৯ টাকা, পরবর্তী ১০০ ইউনিটের জন্য ৮.০২ টাকা, পরবর্তী ২০০ ইউনিটের জন্য ১২.৬৭ টাকা ও পরবর্তী ৪০০ ইউনিটের জন্য ১৪.৬১ টাকা হারে বিদ্যুৎ বিল হবে। প্রতিবেদকের দাবি, ক্ষুদ্র ভোক্তা ও বড় আবাসিক ভোক্তার একই পরিমাণ ডিমান্ড চার্জ হয়, যা ভিত্তিহীন। বিদ্যুৎ বিল বিভিন্ন ট্যারিফ রেট দ্বারা নির্ধারিত। এ ছাড়া ২০ কিলোওয়াটের ঊর্ধ্বের থ্রি ফেজ গ্রাহকদের পাওয়ার ফ্যাক্টর ০.৯৫–এর কম হলে বিধি অনুযায়ী পাওয়ার ফ্যাক্টর পেনাল্টি চার্জ দিতে হয়।বিদ্যুৎ খাত বাংলাদেশ সরকারের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ খাতে প্রতিবছর বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেয়। সংবাদকর্মীর দাবি বিভিন্ন বিতরণ সংস্থা জমির ওপরে খাম্বা বসিয়ে ব্যবসা করছে, কিন্তু খাম্বার জন্য জমির ভাড়া দেয় না, যা অবুঝ বাচ্চার মতো যুক্তি মনে হয়েছে। বেশির ভাগ ১১ কেভি বিতরণ লাইন রাস্তার পাশ দিয়েই করা হয়। কেবল ০.৪১৫ কেভি এলটি লাইন গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে অনেক সময় ফসলের জমির ওপর দিয়ে নিতে হয়, যা সম্পূর্ণ গ্রাহকের স্বার্থে। বৈদ্যুতিক টাওয়ার নির্মাণের নিমিত্ত ব্যবহৃত জমির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিককে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে, যা বিদ্যুৎ আইন-২০১৮–এর ধারা ১২তে বলা হয়েছে।
Post a Comment