Banner 728x90

‘আমার বাবারে ওরা মাইরে ফেলছে’

 ‘আমার বাবারে ওরা মাইরে ফেলছে’



আজ শুক্রবার দুপুরে মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের ফতেপট্টি গ্রামে নিহত রাসেল শেখের (২৩) লাশের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় স্বজনদের। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা শিল্পী বেগম। স্মৃতি হাতড়ে কিছুক্ষণ পরপর হাউমাউ করে কান্না করে ওঠেন তিনি। শিল্পী বেগম আহাজারি করে বলেন, ‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিল বড় ঘর দিবে, ছোট বোনকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে পরে নিজে বিয়ে করবে। আমাগে সবাইরে ভালো রাখবে। আমার বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ হইল না। আমার বাবারে ওরা মাইরে ফেলছে।’






ভূমধ্যসাগরে মারা যাওয়া আটজন হলেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন শেখের ছেলে রিফাত শেখ (২৩), দিগনগর ইউনিয়নের ফতেপট্টি গ্রামের মো. রাসেল (২৩) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইমরুল কায়েস আপন (২২), মাদারীপুরের রাজৈরের কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী (১৯), পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২২), সেনদিয়ার গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২২), উত্তর পাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (২৪) ও কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার (২২)।



স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কয়েক যুবক ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। প্রথমে তাঁরা দুবাই হয়ে উড়োজাহাজে করে লিবিয়ায় পৌঁছান। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। 

মাঝপথে তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যাওয়া পথে তাঁদের নির্যাতন করা হয়। এতে রাজৈরের কোদালিয়ার সজীব কাজী, পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামে মামুন শেখ, সেনদিয়ার সজল বৈরাগী, কদমবাড়ির নয়ন বিশ্বাস, কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রিফাদ, রাসেল ও আপনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া এক পাকিস্তানি নাগরিকও মারা যান। খবর পেয়ে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড।

নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা গতকাল ঢাকার বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ৩০ জন যেতে পারবেন, এমন একটি ছোট নৌকায় ৫২ জনকে নিয়েছিলেন দালালেরা। যে আটজন মারা গেছেন, তাঁদের নৌকার পাটাতনের নিচে জোর করে রাখা হয়েছিল। তাঁরা অক্সিজেন-সংকটের কারণে পাটাতন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু দালালেরা তাঁদের মারধর করে আবার সেখানে পাঠান। এভাবে নির্যাতন ও অক্সিজেন-সংকটের কারণেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, তিউনিসিয়ায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত সহযোগিতা চাইলে করা হবে। এরই মধ্যে সরকারিভাবে লাশগুলো দেশে এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিবার থেকে থানায় কেউ অভিযোগের করেননি। অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



No comments

Powered by Blogger.