Banner 728x90

চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি যখন অস্বস্তি হয়ে ওঠে

চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি যখন অস্বস্তি হয়ে ওঠে

 

চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড় এলাকায় হাঁটু সমান পানি

প্রচণ্ড গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাপপ্রবাহের অস্বস্তি নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছিল নগরবাসীকে। বৃষ্টির জন্য কাতর ছিলেন সবাই। এমন পরিস্থিতিতে ঝুম বৃষ্টি নামে সোমবার বিকেলে। কমে যায় তাপমাত্রা। শীতল হয় পরিবেশ। এমন বৃষ্টিতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার কথা সবার। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি। টানা বৃষ্টিতে কিছুক্ষণের মধ্যে ডুবে যায় নগরের রাস্তাঘাট ও অলিগলি।

শুধু যে জলাবদ্ধতা তা নয়, বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় নগরের জিইসি মোড় এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারসহ খুঁটি ভেঙে পড়ে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। বিকেলেই আঁধার নেমে আসে নগরজুড়ে। ভোগান্তি আর দুর্ভোগ সঙ্গী করে ঘরে ফিরতে হয়েছে অনেককেই।


মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সোমবার বিকেলে বন্দরনগর চট্টগ্রামের নিচু এলাকাসহ অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। নগরের পাঁচলাইশ, প্রবর্তক মোড়, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, শুলকবহর, মির্জাপুল, ওয়াসা মোড়, তিন পোলের মাথা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, চকবাজার, বহদ্দারহাট এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। কোথাও কোথাও গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি জমেছিল।

প্রবর্তক মোড়ে সড়কে হাঁটুসমান পানি। মানুষের হেঁটে চলাচলের সুযোগও ছিল না। তাঁরা সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে কোনোরকমে চলাচল করেন
প্রবর্তক মোড়ে সড়কে হাঁটুসমান পানি। মানুষের হেঁটে চলাচলের সুযোগও ছিল না। তাঁরা সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে কোনোরকমে চলাচল করেনছবি: প্রথম আলো
বিকেলের টানা বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন অফিসফেরত কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। তাঁদের পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা যায়। আবার অনেক এলাকায় পরিবহনসংকট দেখা দেয়। এই সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করে নেন চালকেরা।


চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার বিকেল চারটা থেকে আজ সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তিনটি সংস্থা চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে। এসব প্রকল্পের কাজ চলছে ৭ থেকে ১০ বছর ধরে। এরপরও মৌসুমের প্রথম ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা হওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

গত বছর বর্ষার মৌসুমে অন্তত ১৩ বার ডুবেছিল চট্টগ্রাম নগর। এর মধ্যে অন্তত দুই দফায় টানা চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত পানি জমেছিল নগরের বিভিন্ন এলাকায়। ওই সময় নগরের যান চলাচলের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। পানিতে মানুষের ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাব ও জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়।

পথে পথে মানুষের কষ্ট
বেলা তিনটায় বৃষ্টি শুরুর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে নগরের প্রবর্তক মোড়ে পানি জমে যায়। বিকেল সাড়ে চারটায়ও পানি নামেনি। প্রায় হাঁটুসমান পানিতে ডুবে থাকে রাস্তা। গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। মানুষের হেঁটে চলাচলের সুযোগও ছিল না। তাঁরা সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে কোনোরকমে চলাচল করেন।

বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় নগরের জিইসি মোড় এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারসহ খুঁটি ভেঙে পড়ে
বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় নগরের জিইসি মোড় এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারসহ খুঁটি ভেঙে পড়েছবি: জুয়েল শীল
বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, প্রবর্তক মোড়ে গাড়ির জট। মোড়ে শত শত মানুষ গাড়ির অপেক্ষায়। মাঝেমধ্যে রিকশা কিংবা অটোরিকশা এলেই যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কারও জায়গা হয়, কারও হয়নি। এর মধ্যে প্রবর্তক মোড় থেকে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত ২০ টাকার রিকশাভাড়া নেওয়া হয় ৫০ টাকা।

অফিসফেরত বোরহান উদ্দিন জানান, তিনি ওই এলাকায় একটি অফিসে চাকরি করেন। ছুটি হওয়ার পর অফিস থেকে বের হয়ে দেখেন, রাস্তায় হাঁটুসমান পানি। তা ডিঙিয়ে কোনোরকমে পার হন। এরপর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয় আধা ঘণ্টা।

অফিসের কাজে নগরের তিন পোলের মাথায় গিয়েছিলেন জিয়াউল হক। কিন্তু রাস্তায় পানি জমে থাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, এমন বৃষ্টিতেই যদি এভাবে পানি জমে যায়, তাহলে তো সামনের দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে।

একটি বেসরকারি অফিসে বিকেলের পালায় কাজ করেন জাবেদুল ইসলাম। অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়ে দুর্ভোগে পড়েন নগরের বাকলিয়া এলাকার এই বাসিন্দা। তিনি বলেন, বাসা থেকে বহদ্দারহাট এসে দেখেন পানি। এরপর শুলকবহরেও ছিল হাঁটুপানি। পরে উড়ালসড়ক দিয়ে আসেন। কিন্তু প্রবর্তক মোড়ে এসে আবার বিপাকে পড়েন। সেখানে হাঁটুপানিতে রাস্তা ডুবেছিল।

জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম নগরের ওয়াসা এলাকায় মানুষের ভোগান্তি 
জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম নগরের ওয়াসা এলাকায় মানুষের ভোগান্তিছবি: সৌরভ দাশ
এমন সময়ে জলাবদ্ধতা যেন নিয়মিত ঘটনা চকবাজারের মুহাম্মদ শাহ আলী লেনে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চাক্তাই খালের পাশের এলাকায় বৃষ্টি শুরুর পরপরই পানি উঠতে শুরু করে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায়ও পানি জমেছিল বলে জানান বাসিন্দা আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভোগ যেন দূর হবে না। প্রতিবছরই আশ্বাস দেন কর্তারা, কিন্তু একবার বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি।’


এদিকে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় স্কুলফেরত সন্তানদের নিয়ে বিপদে পড়েন অভিভাবকেরা। নগরের দামপাড়ার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আঁখি আশরাফ বলেন, তাঁর মেয়ের বিদ্যালয় ছুটি হয় পৌনে পাঁচটায়। মেয়েকে আনতে গিয়ে দেখেন, ওয়াসা মোড় পানিতে তলিয়ে গেছে। বিকল্প পথ ঘুরে বিদ্যালয়ে পৌঁছান। মেয়েকে নিয়ে বাসায় পৌঁছাতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ১০-১৫ মিনিটে যাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ সবচেয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও প্রকল্প পরিচালক ফেরদৌস আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টিতে কিছু কিছু জায়গায় পানি উঠেছে। তবে কোথাও বেশিক্ষণ পানি জমেছিল না। প্রকল্পের আওতায় খালগুলো পরিষ্কার করায় পানি দ্রুত নেমে গেছে। আর কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কি না, তা-ও যাচাই করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.